বাংলাদেশ শ্রম আইন অনুযায়ী পেমেন্ট রিলেটেড কিছু গুরুত্বপূর্ণ ক্যালকুলেশন || Some important calculations related to payment according to Bangladesh labor law.

 

শ্রম আইন অনুযায়ী পেমেন্ট রিলেটেড  কিছু গুরুত্বপূর্ণ ক্যালকুলেশন।

ভুমিকাঃ আমরা যারা বিভিন্ন শিল্প কারখানায় কাজ করি প্রতিনিয়ত কিছু হিসাব বের করতে কঠিন হয়ে যায় এবং আমরা যারা এই সেক্টরে নতুন আছি  বাংলাদেশ শ্রম আইন সম্পর্কে  ভালো ধারণা না থাকতে পারে  তাদের জন্য আমাদের এই ছোট আয়োজন। আশাকরি আপনাদের কিছুটা উপকারে আসবে।


এখানে যে সব কেলকুলেশন থাকছেঃ

১. বেসিক বেতন বের করার নিয়ম।

২. ওভার টাইম বের করার নিয়ম।

৩. অনুপস্থিত কর্তন বের করার নিয়ম।

৪. মাসের মাঝখানে যোগদান করলে তাহার বেতন কেলকুলেশন বের করার নিয়ম।

৫. অর্জিত ছুটির টাকার হিসাব বের করার নিয়ম।

৬. মৃত্যু জনিত ক্ষতিপূরন বের করার নিয়ম।

৭. খোরাকী ভাতা হিসাব বের করার নিয়ম।

৮. পাঁচ বছরের উপরে কিন্তু দশ বছরের নিছে এবং দশ বছরের উপরে কাজ করার ক্ষতিপূরন হিসার বের করার নিয়ম।

৯. মাতৃত্বকালীন হিসাব বের করার নিয়ম।

১০. লেট করে অফিসে আসার জন্য কর্তন করার নিয়ম।

আরো জানতে-

সিভিকিভাবে লিখতে হবে || How to write a slandered CV

১. বেসিক বেতন বের করার নিয়মঃ

মনে করি একজন শ্রমিকের মোট বেতনঃ ৮০০০ টাকা।

সুত্রঃ {মোট বেতন-(চিকিৎসা ভাতা(৬০০)+যাতায়াত ভাতা(৩৫০)+খাদ্য্ ভাতা(৯০০)} ÷১.৫}

সমাধানঃ

এখন মোট বেতন থেকে ভাতা বাদ দিয়ে পায়ঃ

                           ={৮০০০-(৬০০+৩৫০+৯০০) ÷১.৫}

                           =(৮০০০-১৮৫০) ÷১.৫

                           =৬১৫০÷১.৫

                           =৪১০০ টাকা।

এই ৪১০০ টাকা হলো মূল বেতন অর্থাৎ বেসিক

২. ওভার টাইম বের করার নিয়মঃ

মনে করি একজন শ্রমিকের মোট বেতনঃ ৮০০০ টাকা।

আমরা জানি ওভার টাইম মূল মজুরীর দ্বিগুণ,

প্রতি ঘন্টা ওভার টাইম হার,      = (মূল মজুরী ÷২০৮) = ×২

                                                  =(৪১০০ ÷২০৮) ×২

                                                   =১৯.৭১×২

                                                   =৩৯.৪২ টাকা।

এই ৩৯.৪২ টাকা হলো এক ঘন্টার ওভার টাইম।

 আরো জানতে:Recruitment Policy||নিয়োগ নীতিমালা

৩. অনুপস্থিত কর্তন বের করার নিয়মঃ

মনে করি একজন শ্রমিকের মোট বেতনঃ ৮৪২০ টাকা এবং জানুয়ারী মাসে সে দুই দিন অনুপস্থিত।

প্রথমে আমাদের তাহার মূল মজুরী বের করতে হবে,

                                             = ৮৪২০-১৮৫০= ৬৫৭০ টাকা

                                             = ৬৫৭০÷১.৫= ৪৩৮০ টাকা ।

                                            = ৪৩৮০ টাকা মূল মজুরী ।

আমরা জানি অনুপস্থিত কর্তন সব সময় মূল মজুরী থেকে হয়ে থাকে,

                                       = ৪৩৮০÷৩০= ১৪৬ টাকা একদিনের মজুরী।

      যেহেতু সে দুই দিন অনুপস্থিত তাহলে,

                                      = ১৪৬×২= ২৯২ টাকা

২৯২ টাকা দুই দিনের অনুপস্থিত কর্তন।

সুত্রঃ বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা ২০১৫, বিধি-১১৫।



৪. মাসের মাঝখানে যোগদান করলে তাহার বেতন কেলকুলেশন বের করার নিয়মঃ

মোছাঃ সুমনা

পদবীঃ সহকারী মেশিন অপারেটর

যোগদানঃ ০৫-০৫-২০২১

মোট মজুরীঃ ৮০০০ টকা।

যেহেতু মাসের মাঝখানে যোগদান করেছে এক্ষেত্রে মোট মজুরীকে উক্ত মাসের দিন গুলো দ্বারা ভাগ করিয়া উক্ত মেয়াদের দিনগুলিকে গুণ করিয়া মজুরী হিসাব করিতে হইবে।

যেহেতু মাসের মাসের পাঁচ তারিখে যোগদান করেছে,

                    =৮০০০÷৩১=২৫৮.০৬ টকা।  

 (যে মাস যে কয়দিন হবে তত দিয়ে ভাগ দিতে হবে)

                     =২৫৮.০৬ এক দিনের মোট মজুরী ।

(৫ তারিখে যোগদান করলে ৫ তারিখ সহ ৩১ তারিথ মোট-২৭ দিন)

এক দিনের মোট মজুরী ও উক্ত মেয়াদের দিনগুলিকে গুণ করে পায়,

                    =২৭×২৫৮.০৬= ৬৯৬৭.৬২ টাকা

উক্ত মাসের তাহার প্রাপ্ত মজুরী ৬৯৬৭.৬২ টাকা

সুত্রঃ বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা ২০১৫, বিধি-১১৪।

আরো জানতে-

Maternity benefits and miscellaneous discussions ।। মাতৃত্বকালীন সুবিধা ও বিবিধ আলোচনা

৫. অর্জিত ছুটির টাকার হিসাব বের করার নিয়মঃ

কোন প্রতিষ্ঠানে অবিচ্ছিন্ন্ভাবে (এক) বৎসর চাকরি সম্পূর্ন করিয়াছেন এমন প্রত্যেক শ্রমিক পরবর্তী ১২(বার) মাস সময়ে তাহার পূর্ববর্তী ১২(বার) মাস কাজের জন্য মজুরীসহ প্রতি ১৮ দিন কাজের জন্য দিন (এক দিন হারে অর্জিত ছুটি প্রাপ্য হইবেন) 

 পদ্ধতিঃবাৎসরিক ছুটি  পদ্ধতি : প্রত্যেক শ্রমিক কর্মচারী যাহাদের নিয়মিত ভাবে চাকরীর মেয়াদ বৎসর পূর্ণ হয়েছে, তারা পরবর্তী ১২ মাস সময়ে তার পূর্ববর্তী ১২ মাসের (কোন দোকান বা বানিজ্য বা শিল্প প্রতিষ্ঠান অথবা কোন কারখানা সড়ক পরিবহন প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ১৮ দিনে ১ দিন)  প্রতি ১৮ দিন কাজের জন্য দিন হারে অর্জিত ছুটি পাবে। কোন শ্রমিক ১২ মাস মেয়াদের মধ্যে তার ছুটি সম্পূর্ণ বা অংশ ভোগ না করলে উক্ত প্রাপ্য ছুটি পরবর্তী ১২ মাস মেয়াদে তার প্রাপ্য ছুটির সাথে যোগ হবে। কিন্তু পাওনা অর্জিত ছুটি ৪০ দিনের বেশী হলে তার ছুটি পাওনা বন্ধ হয়ে যাবে।

বাৎসরিক ছুটি হিসাব পদ্ধতিঃ

প্রাপ্য ছুটি = মোট কর্মদিবস/১৮

বাৎসরিক ছুটি নগদায়নঃ

প্রতি বছর মোট অর্জিত ছুটির অর্ধেক কর্তৃপক্ষের নিকট রেখে বাকি ছুটি নিলিখিত ভাবে নগদায়ন করা হয়।

বার্ষিক ছুটির টাকা = (মোট বেতন /৩০)* প্রদেয় বার্ষিক ছুটি

 

মনে করি একজন শ্রমিকের মোট মজুরী ৯৫০০ টাকা,

মোট অর্জিত ছুটির দিন ২৫ দিন,

মোট মজুরীকে ৩০ দিয়ে ভাগ করে পায়,

                  =৯৫০০÷৩০= ৩১৬.৬৬ টাকা।

এক দিনের অর্জিত ছুটির টাকা ও মোট অর্জিত ছুটির দিনগুলিকে গুণ করে পায়,

                   =২৫×৩১৬.৬৬= ৭৯১৬.৫ টাকা।

অর্জিত ছুটির টাকা পরিমাণ ৭৯১৬.৫ টাকা

 

সুত্রঃ বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬, ধারা-১১৭ এবং বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা ২০১৫, বিধি-১০৭।



৬. মৃত্যু জনিত ক্ষতিপূরন বের করার নিয়মঃ

মোঃ ইমরান হোসেন

পদবীঃ অপারেটর

মোট মজুরীঃ ৯৫০০ টাকা।

চাকুরীর বয়সঃ ৪ বছর

মৃত্যুঃ প্রতিষ্ঠানে কমরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ।

আমরা জানি কমস্থলে মৃত্যুবরণ করিলে প্রতি বছরের জন্য ৪৫ দিনের মজুরী পাবে,

মোট বছর ও মোট দিনগুলিকে গুণ করে পায়,

                            = ৪×৪৫= ১৮০ দিন ।

  প্রথমে মূল মজুরী বের করে নিতে হবে, = ৯৫০০-১৮৫০=৭৬৫০

                            =৭৬৫০÷১.৫= ৫১০০

                            =৫১০০÷৩০= ১৭০ টাকা।

তাহার এক দিনের মজুরী ১৭০ টাকা।

এক দিনের মূল মজুরীকে মোট দিন দিয়ে গুণ করে পায়,

                             =১৭০×১৮০=৩০৬০০ টাকা

বিঃদ্রঃ আরও অন্যান সুবিধা প্রাপ্ত হবেন যেমনঃ যে মাসের মৃত্যু বরন করেছে উক্ত মাসর বেতন, অর্জিত ছুটির টাকা, ইন্সুরেন্স পলিসির পাওনা। উক্ত শ্রমিক কর্মকালীন দুর্ঘটনায় মৃত্যু বরন করিলৈ ধারা-১৫১ অনুযায়ী সুবিধা প্রাপ্ত হতেন।

সুত্রঃ বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬, ধারা-১৯

আরো জানতে-

পার্সোনাল ফাইল সম্পর্কিত ডকুমেন্ট ডাউনলোড

৭. খোরাকী ভাতা হিসাব বের করার নিয়মঃ

মনে করি একজন শ্রমিকের মোট বেতনঃ ৮০০০ টাকা।

এখন মোট বেতন থেকে ভাতা বাদ দিয়ে পায়ঃ ৮০০০-১৮৫০= ৬১৫০ টাকা।

                     এখনঃ ৬১৫০÷১.৫= ৪১০০ টাকা।

এই ৪১০০ টাকা হলো মূল বেতন অর্থাৎ বেসিক।

আমরা জানি খোরাকী ভাতা মূল মজুরী অর্ধেক,

                        =৪১০০÷২= ২০৫০ টাকা ।

                        =২০৫০÷৩০= ৬৮.৩৩ টাকা ।

এই ৬৮.৩৩ টাকা একদিনের খোরাকী ভাতা

সুত্রঃ বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ (সংশোধিত, ২০১৩), ধারা-২ (৯ক)।

৮. পাঁচ বছরের উপরে কিন্তু দশ বছরের নিছে এবং দশ বছরের উপরে কাজ করার ক্ষতিপূরন হিসার বের করার নিয়মঃ

(ক) মনে করি একজন শ্রমিকের মোট বেতনঃ ৮৪২০ টাকা।

চাকরীর বয়সঃ ৭ বছর

প্রথমে আমাদের মূল মজুরী বের করতে হবে,

                       = ৮৪২০-১৮৫০= ৬৫৭০ টাকা

                       = ৬৫৭০÷১.৫= ৪৩৮০ টাকা ।

                       = ৪৩৮০ টাকা মূল মজুরী ।

আমরা জানি পাঁচ বছরের উপরে কিন্তু ১০ বছরের নিছে  চাকরী করলে প্রতি বছরের জন্য ১৪ দিনের মজুরী পাবে,

এখন মোট চাকরীর বয়স ও মজুরী দিনগুলিকে গুণ করে পায়,

                 =১৪×৭=৯৮ দিন

প্রথমে একদিনের মূল মজুরী বের করতে হবে,

                 = ৪৩৮০÷৩০= ১৪৬ টাকা এক দিনের মজুরী্

মোট দিন ও একদিনের মজুরী গুণ করে পায়,

                 =১৪৬×৯৮=১৪৩০৮ টাকা।

পাঁচ বছরের জন্য ১৪৩০৮ টাকা পাবে।

(খ) যদি দশ বছরের উপরে চাকরী করে থাকেন।

আমরা জানি দশ বছরের উপরে চাকরী করলে প্রতি বছরের জন্য ৩০ দিনের মজুরী পাবে,

মনে করি একজন শ্রমিকরে চাকরী বয়স ১২ বছর তাহলে,

                      =৩০×১২=৩৬০ দিন।

              মোট দিন ও একদিনের মজুরী গুণ করে পায়,

                     =৩৬০×১৪৬ =৫২৫৬০ টাকা।

              বার বছরের জন্য ৫২৫৬০ টাকা পাবে। 

সুত্রঃ বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬, ধারা-২৭(৪)

৯. মাতৃত্বকালীন হিসাব বের করার নিয়মঃ

মোছাঃ সামিয়া আক্তার

পদবীঃ অপারেটর

আমরা জানি মাতৃত্বকালীন মজুরী হিসাব পূর্ববর্তী তিন মাসের মোট মজুরী এবং পূর্ববর্তী মোট কর্ম দিবস দিয়ে হিসাব করতে হবে



মাস

কর্ম দিবস

মজুরী

মে

২৪

৮৫৭৫

জুন

২৩

৯৩৬৭

জুলাই

২২

৭৫৬৫

                                 মোট

৬৯ দিন

২৫৫০৭ টকা

এখন মোট মজুরী ও মোট কর্ম দিবসকে ভাগ করে পায়, 

                           =২৫৫০৭÷৬৯=৩৬৯.৬৬ টাকা।

আমরা মাতৃত্বকালীন সুবিধা ১১২ দিন দিয়ে থাকি এখন,

                           =১১২×৩৬৯.৬৬= ৪১৪০২ টাকা।

মোট ১১২ দিনের মাতৃত্বকালীন সুবিধা হলো= ৪১৪০২ টাকা ।

আমরা সাধারণত প্রথমে ৫৬ দিনের সুবিধা দিয়ে থাকি,

                           =৪১৪০২÷২=২০৭০১ টাকা।

৫৬ দিনরে মাতৃত্বকালীন সুবিধার পরিমাণ= ২০৭০১ টাকা

সুত্রঃ বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬, ধারা-৪৮(২)



১০. লেট করে অফিসে আসার জন্য কর্তন করার নিয়মঃ

মোঃ সেলিম মিয়া

পদবীঃ সহকারী অপারেটর

মোট মজুরীঃ ৮৪২০ টাকা

মনে করি সে একদিন ৩ ঘন্টা লেট করে আসেন,

প্রথমে আমাদের তাহার মূল মজুরী বের করতে হবে,

                   = ৮৪২০-১৮৫০= ৬৫৭০ টাকা

                   = ৬৫৭০÷১.৫= ৪৩৮০ টাকা ।

                  = ৪৩৮০ টাকা মূল মজুরী ।

আমরা জানি লেট কর্তন সব সময় মূল মজুরী থেকে হয়ে থাকে,

                  = ৪৩৮০÷৩০= ১৪৬ টাকা।

এক দিনের মূল মজুরী ১৪৬ টাকা।

এক দিনের মূল মজুরী ও একদিনের সাধারণ কর্মঘন্টা কে ভাগ করে পায়,

আমরা জানি এক দিনের সাধারণ কমঘন্টা ৮ ঘন্টা,

               =১৪৬÷৮=১৮.২৫ টাকা

মনে করি সে একদিন ৩ ঘন্টা লেট করে আসেন এখন,

               =১৮.২৫×৩=৫৪.৭৫ টাকা

৩ দিনের মোট কর্তন= ৫৪.৭৫ টাকা ।

সুত্রঃ বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬, ধারা-১২৬।


লেখক:

মোঃ আবু রায়হান

এক্সিকিউটিব- এডমিন এন্ড এইচ আর

মোবাঃ ০১৬২০১৯০০০৯




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ

  1. অর্জিত ছুটির ক্ষেত্রে 'লে-আউট' বিষয়টা কি বুঝিয়ে বলবেন,প্লিজ।

    উত্তরমুছুন