ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রীর ব্যবহার ও বিস্তারিত || Use and details of personal protective materials



 ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রীর বিধানঃ

কারখানায় ব্যবহৃত যন্ত্র, রাসায়নিক দ্রব্য, বস্তু ও প্রক্রিয়াদি এবং সেসবের ঝুঁকির (চলমান বস্তু, ধারালো প্রান্তদেশ, ধুলি, ক্ষয়কারক পদার্থ ইত্যাদির) উপর ভিত্তি করে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী সরবরাহের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সেইফটি কমিটির ঝুঁকি নিরূপণের কাজ পরিচালনা করে এবং তা নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনী PPE। সাধারণ নীতিমালা হলো- শ্রমিকের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্যে যখন কারিগরি নিয়ন্ত্রণ (যেমন চোখের নিরাপত্তা) অথবা প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ (যেমন কাজের সময় হ্রাস) যথেষ্ট হয় না, তখন ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী অবশ্যই সরবরাহ করতে হবে। 


ক) ব্যক্তিগত সুরক্ষার ধরনঃ

যথাযথ PPE নির্বাচন করা খুবই গুরুত্বপূণ। অন্যথায় এটি সম্পূর্ণরূপে অকার্যকর হতে পারে এবং সুরক্ষার বিষয়ে ব্যবহারকারীর মনে একটি ভুল ধারণা জন্মাতে পারে। বিভিন্ন সেকশনে কর্মরত থাকাবস্থায় আমাদের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সুরক্ষার জন্য যে সব পদক্ষেপ নেয়া হয়। 

হাতের সুরক্ষা : গ্লোভসঃ

মেটাল গ্লোভস কাটিং মেশিনে ফেব্রিক কাটার সময় সর্বদা হাতে মেটাল গ্লোভস ব্যবহার করা হয়। মেটাল গ্লোভস ব্যবহার না করলে কাটিং মেশিনে ব্যবহৃত ব্লেড বা নাইফ দ্বারা  হাতের আঙ্গুল অথবা শরীরের অন্য কোন স্থান কেটে যেতে পারে। মেটাল গ্লোভস নেট ছিড়ে গেলে অথবা  ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে গেলে তাৎক্ষনিকভাবে পরিবর্তন করে নিতে হবে।  প্রতিটি ব্যান্ডনাইফ মেশিনে দহাতে দুটি দস্তানা দরকার হয়।

কাপড়ের গ্লোভসঃ ফিউজিং মেশিনে নয় কাজ করার জন্য কাপড়ের গ্লোভস দেয়া হয়, যাতে শ্রমিকের ত্বক পুড়ে না বা ক্ষতি না হয়। এ ছাড়া গ্রাইন্ডিং মেশিনে কাজ করার জন্যও কাপড়ের গ্লোভস দেয়া হয়। 

রাবারের দস্তানাঃ রাসায়নিক পদার্থ নিয়ে কাজ করার সময় তার ছিটা ও সংস্পর্শ থেকে রক্ষা  করার প্রয়োজন রাবারের গ্লোভস। বৈদ্যুতিক শক থেকে রক্ষা পাবার জন্য ইলেকট্রিশিয়ানরাও এ গ্লোভস ব্যবহার করে।

নিডল গার্ডঃ সুইং মেশিনে নিডল গাইড আঙ্গুল তথা হাতের সুরক্সা করে। দৈনন্দিন কাজের শুরুতে নিডেল গাইড নিশ্চিত করে কাজ শুরু করতে হবে। উচু করে কাজ করা যাবে না। নিডেল গাইড এমনভাবে নির্র্ধারন করতে হবে যাতে এর মধ্যে দিয়ে আঙ্গুল প্রবেশ না করে। 

শ্রবণ শক্তি সুরক্ষাঃ

যেসকল ব্যক্তিকে দীর্ঘ সময় প্রায় ৮ ঘণ্টা ধরে কাজ করতে হয় সেক্ষেত্রে শ্রবণ শক্তি সুরক্ষার জন্যে সেখানে মালিক কর্তৃক PPE সরবরাহ করা আবশ্যক। শ্রমিকেরা স্বতঃস্ফুর্তভাবে তখন সেগুলো পরতে পারে বা নাও পরতে পারে। কিন্তু শব্দমাত্রা ৮৫ dBA (শব্দময় এমন এলাকা যেখানে দু’জন সহকর্মীকে দু’মিটার দূর হতে পরস্পরের কথা শোনার জন্যে চিৎকার করার প্রয়োজন হয়) এর বেশি হলে PPE পরিধান করা তখন বাধ্যতামূলক হয়ে যায়। ১৩৫ dBA এর ঊর্ধ্বমাত্রার শব্দ মাত্র একবার প্রকাশের ক্ষেত্রেও শ্রতিরক্ষা ব্যবস্থার প্রয়োজন হয়। ব্যবহৃত শ্রতিরক্ষা ব্যবস্থার প্রকারভেদে শব্দ হ্রাসকরণের তারতম্য ঘটে। শ্রবণশক্তির ক্ষতি অপূরণীয়।

কানছিপি বা ইয়ারপ্লাগঃ এটা ২০dBA শব্দ কমাতে সাহায্য করে। সাধারনতঃ থ্রেড সাকিং মেশিনে কাজের সময় ইয়ার প্লাগ ব্যবহার করতে হয়।

ইয়ার মাফঃ এটা ৩০-৪০ dBA শব্দ কমাতে সাহায্য করে। এগুলি শব্দকে কানছিপির চেয়ে অধিকতর পরিমাণে হ্রাস করে। এগুলি সেইফটি হেলমেটের সাথে সমন্বিতভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। সাধারনতঃ জেনারেটর রুমে এধরনের ইয়ারমাফ ব্যবহার করা হয়। এছাড়া ড্রিলিং এর কাজের জন্যও ইয়ারমাফ ব্যবহার করা হয়।   

৩) শ্বাস প্রশ্বাস সুরক্ষাঃ মাস্ক ব্যবহার করে ডাস্ট হতে নিজেকে রক্ষা করা যায়। অন্যথায় ফুসফুসজনিত রোগের সৃষ্টি হতে পারে। বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ধরনের মাস্ক ব্যবহৃত হয়।  কাটিং সেকশনে কাপড় কাটার ফলে সর্বাক্ষনিক ডাস্ট উড়ে থাকে। সেই ডাস্ট থেকে বাচাঁর জন্য কাটিং সেকশনের সকলের মাস্ক পরে থাকতে হবে।  কাটিং সেকশনে ডাস্ক বের করে দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক এক্সজাস্ট ফ্যান সর্বাক্ষনিকের জন্য সুইচ অন করে রাখতে হবে। 

সুইং সেকশনে ওভারলক মেশিন তথা সকল মেশিনের অপারেটর, হেল্পার ও মেশিনের নিকট কর্মরত সকলকে মাস্ক পরতে হবে। 

সক্রিয় কার্বন ফিল্টারযুক্ত মাস্কঃ মুক্ত বায়ু চলাচলের সুব্যবস্থাযুক্ত স্পট ক্লিনিং রুমে কর্মরত ব্যক্তিগণকে এ ধরনের মাস্ক পরিধান  করতে হবে। কারন কেমিক্যালের বিষাক্ত গ্যাস, ধুলাবালি শরীরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করলে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে।

গ্যাস মাস্কঃ বায়ুমন্ডলে যখন অক্সিজেনের পরিমাণ অপর্যাপ্ত হয়ে পড়ে জীবন বাঁচানোর জন্য তখন শ্বাস প্রশ্বাস যন্ত্র প্রয়োজন হয়। শ্রমিক শ্বাসকার্যে পরিবেষ্টনকারী বায়ুকে কাজে লাগায় না, কিন্তু সাবলীল সরবরাহের মাধ্যমে শ্বসিত বায়ুকে ব্যবহার করে। অগ্নি নির্বাপণ কর্মীরা বা আবদ্ধ স্থানের লোকেরা এ মাস্ক ব্যবহার করবে।

৪) চোখ ও মুখমন্ডল সুরক্ষাঃ

আই গার্ডঃ দৈনন্দিন কাজের শুরুতে মেশিনে আই গার্ড নিশ্চিত করে কাজ শুরু করতে হবে। মেশিনে আই গার্ড থাকলে চোখে আঘাত লাগবে না। উচু করে বা নিদিষ্ট জায়গা থেকে বাহিরে রেখে কাজ করা যাবে না। আই গার্ড ভেঙ্গে গেলে সুপারভাইজারের মাধ্যমে স্টোর থেকে উঠাতে হবে।  

চশমাঃ স্পট রিমুভিং রুমে স্পট ম্যানরা চশমা ব্যবহার করবে। চোখে চশমা থাকলে মেশিন চলা অবস্থায় পানি মিশ্রিত কেমিক্যাল চোখে পড়ার সম্ভাবনা থেকে নিজেকে রক্ষা করা যাবে। 

গগল্সঃ নিরাপত্তা চশমার মতোই এগুলি ক্ষুদ্র কণা ও উড়ন্ত বস্তু হতে চোখকে রক্ষা করে। সাধারনত গ্রাইন্ডিং মেশিন চালাবার সময় গগল্স ব্যবহার করলে চোখ সুরক্ষিত থাকবে।

৫) মাথার সুরক্ষাঃ

সেইফটি হেলমেটঃ এগুলি পতনশীল বস্তু/উড়ন্ত বস্তু ও খুলে যাওয়া পাইপের আঘাত হতে রক্ষা করে।  এধরনের টুপি বৈদ্যুতিক ঝুঁকি হতেও সুরক্ষা দেয়। ভবনের কোন কাজ করার সময়, বৈদ্যুতিক কাজ করার সময় অথবা জেনারেটর রুমে কাজ করার সময় এ ধরনের টুপি ব্যবহার করা হয়।

স্কার্ফঃ ডাস্ট থেকে চুলকে রক্ষা করার জন্য কাটিং ও সুইং সেকশনে মেয়েদেরকে স্কার্ফ ব্যবহার করতে হবে।  

এছাড়া এগজস্ট ফ্যানের কাছে যে সব মেয়েরা কাজ করবে তারাও স্কার্ফ পরিধান করবে।

৬) পায়ের পাতা সুরক্ষা

গাম বুটঃ জেনারেটর রুমে কাজের জন্য এবং ইলেকট্রিক্যাল কাজের জন্য অবশ্যই গাম বুট পড়ে কাজ করতে হবে। গাম বুট পায়ে থাকলে কোন ধরনের দূর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকেনা। 

স্পট রিমুভিং রুমে মেশিন চালানোর পূর্বে অবশ্যই গাম বুট পড়ে কাজ করতে হবে। গাম বুট পায়ে থাকলে পানি মিশ্রিত কেমিক্যাল পায়ে পড়ে কোন ধরনের দূর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকেনা। 

৭) দেহ সুরক্ষাঃ দেহ সুরক্ষার জন্যে বিভিন্ন প্রকার PPE রয়েছে। যেমনঃ

উায়ার জ্যাকেটঃ আগুনের কাছে চলাচলের জন্য ফায়ার জ্যাকেট ব্যবহার করতে হয়।

এপ্রোনঃস্পট রিমুভিং রুমে মেশিন চলা অবস্থায় এপ্রন পড়ে কাজ করতে হবে। এতে পানি মিশ্রিত কেমিকেল গায়ে পড়ার দূর্ঘটনা থেকে নিজেকে রক্ষা করা যাবে ।

খ) PPE-এর সীমাবদ্ধতাঃ

১)PPE থেকে অধিকতর কার্যকর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাঃ ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির পরিমন্ডলে PPE এর ব্যবহারকে সবচেয়ে নির্ধারনে কার্যকর পন্থা বলে বিবেচনা করা হয়। কারণ এগুলো ঝুঁকিকে কমাতে পারে না, শুধুমাত্র পরিধানকারীকে রক্ষা করে (এবং অন্য কাউকে না); অধিকন্তু সহজেই এমন হতে পারে যে, সেগুলি যথাযথ সুরক্ষা দেবে না (যেমন PPE-এর ভুল নির্বাচন, শ্রমিকেরা সেগুলি ব্যবহার করে না অথবা যথাযথভাবে পরে না)। এজন্যে যান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ও প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার ন্যায় অন্য প্রকার নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি, যেখানে সম্ভব বাস্তবায়ন করা জরুরি। উদাহরণ স্বরূপ :

ক)  স্পট ক্লিনিং কক্ষে বাতাসের দূষিতাবস্থা দূর করতে যথাযথ বায়ু নিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

খ) মেশিনের শব্দ কমাতে একে আবরণযুক্ত বা ঘিরে রাখতে হবে।

 গ) সুইং মেশিনের আই গার্ড নষ্ট হলে তা মেরামত করতে হবে।

২) ভুল PPE অনেক সময় এটি ঘটে যে, শ্রমিকদের ভুল PPE সরবরাহ করা হয়। পিপিই সম্পর্কে শ্রমিকদের ভুল ধারণা থাকলে ঝুঁকির পরিমান বেড়ে যায়।

৩) অনুপযুক্ত ফিটিংয়ের PPE  PPE কে সঠিক আকারের হতে হবে। যেমন- খুব বড় আকারের রেস্পিরেটর মুখমন্ডলে আঁটসাঁটভাবে লাগবে না। এতে ফাঁক থাকবে / বিপজ্জনক অবস্থা সৃষ্টি করবে। ঠিকমতো না লাগা গ্লোভস শ্রমিকের উৎপাদনশীলতাকে এবং অথবা কাজের মানকে হ্রাস করবে। বড় মাপের নিরাপত্তা জুতা হোঁচট খেয়ে পড়ার ঝুঁকি ডেকে আনতে পারে। তাই PPE গুলি পরস্পর সুসামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।

৪) পরিধান না করাঃ মালিক কর্তৃক PPEসরবরাহ করা সত্ত্বেও শ্রমিকেরা সেগুলি নাও পরতে পারে। কারণ হলো যথাযথ সংযুক্তির ক্ষেত্রে

অস্বাচ্ছন্দ্য ও কষ্টকর অবস্থার সৃষ্টি হওয়া অথবা তাদের সচেতন না করা।

৫) ব্যবহার করা, নষ্ট ও মেয়াদ উত্তীর্ণ PPE প্রতিবার ব্যবহারের পূর্বে PPE গুলো শ্রমিকদের দিয়ে পরীক্ষা করা প্রয়োজন (ছেড়া বা ফাটা, ছিদ্র, আলগা হওয়া ইত্যাদি খোঁজার জন্যে)। নষ্ট PPE পর্যাপ্ত সুরক্ষা দেবে না। যেমন ছিদ্রযুক্ত  পদার্থের সংস্পর্শে আসা প্রতিরোধ করতে পারে না।

একটি শক্ত টুপি যখন কোনো দৃঢ় চাপ সহ্য করে, লক্ষণীয় কোনো ক্ষতি না হলেও তা পরিবর্তন করা প্রয়োজন। রেস্পিরেটরের কার্টিজের রাসায়নিক শুষে নেয়ার একটি সীমিত ক্ষমতা রয়েছে এবং গলে যাওয়ার আগেই তা প্রতিস্থাপন করতে হবে।

৬) নিয়ম বহির্ভূত রক্ষণাবেক্ষণ ও গুদামজাতকরণঃ

অনেক সময় PPE যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হয় না। এটা শ্রমিকদের রক্ষা করার ক্ষমতাকে নষ্ট করে। সরাসরি সূর্যের আলোতে, ধুলিময় পরিবেশে, রাসায়নিক প্রক্রিয়ার কাছে, খুব গরম বা খুব ঠান্ডা তাপমাত্রায় PPE রাখা ঠিক না। এগুলো তাদের নষ্ট করে ফেলে। তাই যথাপযুক্তভাবে রক্ষনাবেক্ষন ও গুদামজাতকরন করতে হবে।





একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ