প্রাথমিক চিকিৎসা (First Aid)

 প্রাথমিক চিকিৎসাঃ

একজন আহত ব্যক্তিকে সর্ব প্রথম যে সহযোগিতা বা সেবা প্রদান করা হয় তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা বলে। অন্যভাবে আমরা বলতে পারি কোন দৈব দূর্ঘটনা, প্রাকৃতিক দূর্যোগ কিংবা আপদকালীণ সময়ে কোন আহত ব্যাক্তিকে ডাক্তারের নিকট অথবা হাসপাতালে বা অন্য কোন চিকিৎসা কেন্দ্রে প্রেরণের পূর্বে তার অবস্থার যাতে অবনতি না ঘটে তার যথাযথ ব্যবন্থা গ্রহণ করাকেই প্রাথমিক চিকিৎসা বলে।



প্রাথমিক চিকিৎসার লক্ষ্য/ উদ্দেশ্যঃ

) জীবন রক্ষা করা

) রোগীর অবস্থা যাতে আরও অবনতির দিকে না যায় তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা,      

) আরোগ্য লাভ বা পুনঃরুদ্ধারের অগ্রগতি সাধনে সহায়তা করা।

)  ভাঙ্গা হাড় অনড় রাখা

)  ব্যথার উপসম করা।

প্রাথমিক চিকিৎসকের করণীয় কাজঃ

) কী ঘটেছে খুঁজে বের করা

) যে কোন বিপদাপদ থেকে সাবধান হওয়া এবং এদের মোকাবেলায় সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা

) রোগীর জখম বা অবস্থার সাথে ধীর-স্থির মস্তিষ্কে এবং দক্ষভাবে মোকাবেলা করা

) হাতের কাছে যা কিছূ পাওয়া যাবে তা কাজে লাগিয়ে সেবা দেওয়া।

) আহতের যতেœ পরবর্তী পর্যায়ের ব্যবস্থা করা; বিশ্রামের পরামর্শ দেওয়া অথবা আহতকে হাসপাতালে প্রেরনের ব্যবস্থা করা।

 


প্রাথমিক চিকিৎসায় করনীয়ঃ

কেটে গেলে: জীবানুনাশক গজ দিয়ে - মিনিট চেপে ধরতে হবে। অতঃপর ডেটল বা সেভলন দ্বারা জায়গাটি পরিস্কার করতে হবে। ড্রেসিং করে জায়গাটি বেধে দিবে। - মিনিটে যদি রক্ত পড়া বন্ধ না হয়, তবে রোগীকে মেডিকেল রুমে নিয়ে আসতে হবে।

ক্ষতঃ চামড়া বা চামড়ার নীচে কোন অংশ কেটে বা ফেটে যাওয়াকে ক্ষত বলে। ক্ষতের সচচেয়ে বড় চিকিৎসা হল পরিস্কার করা। ক্ষত স্থানে প্রায়ই দেখা যায় ব্যাথা থাকে, কালো দাগ হয়ে যায়। রক্তপাত হয় বা ফুলে যায়। ক্ষত স্থানটি জীবানুনাশক গজ দিয়ে বেধে দিতে হবে। এতে ক্ষতস্থানটি সুরক্ষিত থাকে। জীবানুনাশক গজ দিয়ে বাধার আগে হাত ধুয়ে নিতে হবে।

ক্ষত পরিস্কার করার নিয়মঃ জীবানুনাশক গজ ব্যবহার করে ক্ষতস্থান পরিস্কার করতে হবে। আরো দূষন যেন না ঘটে এজন্য ক্ষতস্থানের মাঝের দিকে থেকে শুরু করে বাহিরের দিক পরিস্কার করতে হবে। ক্লোরহেক্সিডিন অথবা যে কোন এন্টিসেপ্টিক সলিউশন দিয়ে আস্তে ক্ষত পরিস্কার করতে হবে। তবে ছোটখাটো ক্ষত খোলা রেখে চিকিৎসা করা যাবে।

ব্যান্ডেজঃ ক্ষতস্থান পরিস্কার রাখার জন্য ব্যান্ডেজ ব্যবহার করা হয়। ব্যান্ডেজের জন্য জীবানুনাশক গজ ব্যবহার করতে হবে। ব্যবহÍ ব্যান্ডেজ ভিজে গেলে বা তার নিচে নোংরা লেগে গেলে ব্যান্ডিজটি সরিয়ে নিয়ে ক্ষতস্থান আবার ধুয়ে একটি পরিস্কার ব্যান্ডেজ লাগাতে হবে।

চোখে ময়লা পড়লেঃ কিছুক্ষন অপেক্ষা করে দেখতে হবে যে চোখের স্বাভাবিক পানিতে ময়লাটি ধুয়ে যায় কিনা। যদি না যায় তবে নরসল দিয়ে চোখ ধুইয়ে ফেলতে হবে। এতেও যদি ময়লা না যায় তবে পর্যাপ্ত আলোতে এনে হাত দিয়ে আলতোভাবে চোখের পাতা দুইটি পৃথক করতে হবে। যদি ময়লা দেখা যায় তবে পরিস্কার রুমাল দিয়ে ময়লাটি চোখের কোনে এনে বের করতে হবে। যদি পদ্ধতিতেও বের করা না যায় তবে মেডিক্যাল রুমে নিয়ে আসতে হবে।

নাকে রক্ত আসলেঃ বেসিনের সামনে মিনিট দশেক নাকে চাপ দিয়ে রাখতে হবে এবং মুখ দিয়ে নিঃশ্বাস নিতে হবে। রক্ত টেনে ভিতরে নেয়া যাবে না। যদি রক্ত বন্ধ না হয় তবে দ্রুত মেডিকেল রুমে নিয়ে আসতে হবে।

কোন ব্যক্তি অচেতন হলেঃ অচেতন ব্যক্তিকে পাশ ফিরিয়ে মাথা নিচু করে শুইয়ে দিতে হবে। তার শ্বাস নিতে কষ্ট হলে তার জিহ্বা কিছুটা সামনের দিকে টেনে দিতে হবে। বমি করলে সাথে সাথে মুখ পরিস্কার করে দিতে হবে। তার মুখে কোন কিছু খাওয়ানো যাবে না।

পুড়ে গেলেঃ পোড়া অংশটি ঠান্ডা পানিতে ধুয়ে নিতে হবে এবং যতক্ষন জ্বালা না কমে ততক্ষন আস্তে আস্তে পানি ঢালতে হবে। যদি ফোস্কা পড়ে তবে এক টুকরা পরিস্কার কাপড় দিয়ে জায়গাটি ঢেকে রাখতে হবে। ফোস্কাটি ফাটানো যাবে না। বার্ণ ত্রিম ছাড়া কোন প্রকার ত্রিম বা লোশন পোড়া  জায়গায় লাগানো ঠিক নয়।

মাথা বা মুখের ক্ষতঃ  যদি মাথা কেটে যায় তবে ক্ষত অংশের উপর জীবানুনাশক গজ দিয়ে চেপে ধরতে হবে। ৫-৭ মিনিটের মধ্যে রক্ত বন্ধ না হলে মেডিকেল রুমে নিয়ে আসতে হবে।


প্রচুর রক্তক্ষরনঃ প্রচুর রক্তক্ষরন হলে আহত অংশটি উচুঁ করে তুলে ধরে জীবানুনাশক গজ দিয়ে ক্ষতস্থানটি চেপে ধরতে হবে। এক নাগাড়ে অন্ততঃ ৫-৭ মিনিট চেপে ধরে রাখতে হবে। এই সময়ের মধ্যে রক্তপাত বন্ধ হয়েছে কিনা তা দেখার জন্য কখনই গজ তোলা যাবে না। যদি রক্তপাত বন্ধ না হয় তবে মেডিক্যাল রুমে নিয়ে আসতে হবে।

বিদ্যুতায়িত হলেঃ কেউ বিদ্যুতায়িত হলে বিদ্যুতের ঐ নিদিষ্ট সুইচটি বন্ধ করে দিতে হবে। সম্ভব না হলে শুকনা লাঠি দিয়ে তাকে বিদ্যুৎ স্পর্শ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে হবে। এরপর তাকে মাটিতে শুইয়ে মাথা একপাশে কাত করে দিতে হবে। কম্বল দিয়ে তাকে ঢেকে রাখতে হবে যাতে সে উষœ থাকে । পিপাসার্ত হলে তার ঠোট ভেজা কাপড় দিয়ে ভিজিয়ে দিতে হবে। রোগী অজ্ঞান হলে কৃত্রিমভাবে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করতে হবে।

শক কিঃ প্রচন্ড শারীরিক বা মানসিক আঘাতের ফলে শক দেখা দেয়। শক জীবনের জন্য হুমকি স্বরুপ। সাধারনতঃ শরীরের রক্তচাপ বিপজ্জনক মাত্রায় কমে গেলে এ অবস্থায় সৃষ্টি হয়।

যেসব ঘটনা থেকে শক দেখাঃ প্রচন্ড ব্যাথা, শরীরের বিরাট অংশ পুড়ে যাওয়া, প্রচুর রক্তপাত হওয়া, ভীষন অসুস্থতা।

শকের লক্ষনঃ নাড়ির গতি দুর্বল ও দ্রæত, চামড়া ফ্যাকাশে, ঠান্ডা ও ভিজাভিজা, মানসিক অস্থিরতা ও দুর্বলতা, কখনও কখনও চেতনা হারিয়ে যাওয়া, রক্তচাপ খুবই কম।

শকের চিকিৎসাঃ রোগীকে আশ্বস্ত করতে হবে। তার পা মাথার অবস্থান থেকে উচুঁতে রেখে তাকে শুইয়ে রাখতে হবে। রোগী শীত বোধ করলে তার গায়ে কম্বল জড়িয়ে দিতে হবে। শকের কারন জানা গেলে তা দূর করার চেষ্টা করতে হবে।

প্রাথমিক চিকিৎসা বাক্স 

কারখানা ১৫০ জন শ্রমিকের জন্য ১টি প্রাথমিক চিকিৎসা বাক্স দিবে। প্রতিটি প্রাথমিক চিকিৎসা বাক্সের উপরে তালিকায় সকল সরঞ্জামাদি প্রদর্শন করতে হবে। সকল দিক থেকে সহজগম্য স্থানে সকল বাক্স থাকবে। বাক্সের চারিদিক চিহ্নিত থাকবে বাধামুক্ত থাকবে। বাক্স সহজে সনাক্ত করতে এর স্থান নির্ণয় করার জন্য উপযুক্ত চিহ্ন থাকবে।


প্রাথমিক চিকিৎসা দলঃ

ফ্লোরে কর্মরত শ্রমিকদের মধ্য থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা দল গঠন করা আছে। প্রত্যেক বাক্সের জন্য জন করে প্রাথমিক চিকিৎসক রয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসক প্রতি বাক্সের ঔষধ বন্টন বন্টনের রেকর্ড রাখবে। প্রাথমিক চিকিৎসকের জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা রাখতে হবে। শ্রমিকরা যেন খুব সহজে চিনতে পারে জন্য প্রতি বাক্সের সাথে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম ছবি সংযোগ করা আছে। কারখানা প্রাথমিক চিকিৎসা বাক্সের দায়িত্ব প্রাপ্ত প্রত্যেক ব্যক্তিকে সনাক্তকরন সাদা এ্যাপ্রোন দিওয়া আছে।

স্বাস্থ্যসেবা জন্য চুক্তিঃ

কর্মীদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের লক্ষ্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান Meditac Central Hospital এর সাথে চুক্তি করা আছে যা কর্মীদের আই. ডি কার্ড প্রদর্শন করলে অর্ধেক মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করবে বিভিন্ন টিকা কার্যক্রম পরিচালনা করবে।

 








একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ